আমেরিকা (চ্যানেল টিটি): প্রাণঘাতি নোভেল করোনা ভাইরাস-এর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ বার (২ লাখ কোটি) ২ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। মূলধারার সংবাদ মাধ্যেমর খবরে (আমেরিকান) কথাটি নিয়ে নানা বিভ্রান্তি থাকলেও; কংগ্রেসের ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্যে পুরোপুরি পরিস্কার করা আছে। যাতে বলা হচ্ছে- কে পাচ্ছেন এই প্রণোদনা প্যাকেজ; এবং কি ভাবে কত ডলার পাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসিরা। আইনি কাঠামো গুলো নির্ধারণ করা আছে।
আমরা চ্যানেল টিটি দর্শক ও পাঠকদের জন্য এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এটা কি শুধুই 'ইউএস-সিটিজেন’রা পাবেন? কিংবা কে পাচ্ছেন- ১২'শ বা ২৪'শ ডলার! ৫'শ ডলারে চিলড্রেন তথা কোয়ালিফাউড চাইল্ড সম্পর্কেও নির্দেশনা দেয়া আছে। কে, কি ভাবে, কারা পাবেন; সবই আছে কংগ্রেসের ওয়েব-সাইটে।
এছাড়া ‘সেল্ফ-এমপ্লয়েমেন্টে-ইন্স্যুরেন্স’ (বেকার ভাতা) আবেদনের কথাও বলা আছে পাশ হওয়া আইনে। তবে, 'স্টিমুলাস-প্যাকেজ'র দেয়া অর্থ যে একাবেরই দান নয়; সেটা হয়তো অনেকের জানা নেই। তাও তুলে ধরা হচ্ছে।
কংগ্রেসে ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্যে কয়েকশ পৃষ্ঠার দিক-নির্দেশনা রয়েছে।১১৬তম কংগ্রেসে পাশ হওয়া সবগুলো আইন ও প্রস্তাবনা খুঁজে দেখা গেছে; অনেকগুলো প্রস্তবনা রয়েছে ট্রাম্পের এই প্রণোদনা প্যাকেজে। যাতে ফ্যামেলি ফার্স্ট করোনা ভাইরাস রেসপন্স অ্যাক্ট'সহ রয়েছে নানা আইনি বাধ্যবাধকতা।
কোন প্রকার বিভ্রান্তিতে না পড়ে, কিংবা গুজবে কান না দিয়ে গিয়ে https://www.congress.gov/ দেখতে পারবেন, হোয়াইট হাউজ প্রস্তাবিত করোনা-ভাইরাস 'স্টিমুলাস-প্যাকেজ' কি? এর বিনিফিসিয়ারি কারা হবেন; ইত্যাদি।
হোয়াইট হাউজের 'স্টিমুলাস প্যাকেজ'র আইনি নাম হচ্ছে- "কোরানা ভাইরাস এইড রিলিফ অ্যান্ড ইকনোমিক সিকিউরিটি অ্যাক্ট"। ট্রাম্প প্রশাসন ও ইউএস কংগ্রেস প্রণোদনা প্যাকেজটির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়। যাকে বলা হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রণোদণা প্যাকেজ।
নানা দেন দরবার শেষে আমেরিকাতে বসবাসকারি বৈধ-নাগরিকদের হাতে নির্ধারিত অর্থ সরাসরি পৌঁছে দেয়া হবে। তার জন্য (২৫০ বিলিয়ন) ২৫ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে বরাদ্দ করা হয়েছে (৩৫ বিলিয়ন) ৩৫ হাজার কোটি ডলার। আর কর্মহীনদের জন্য বিমা (আন-এমপ্লয়েমেন্ট ইনস্যুরেন্স) বাবদ আরও (২৫ বিলিয়ন) ২৫ হাজার কোটি ডলার রাখা হয়েছে। বেকার ভাতা তথা কর্মহীনদের এ অর্থ দেয়া হবে রাজ্য সরকারকে।
প্রত্যেকটি রাজ্য সরকার তাদের বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দিবেন স্ব স্ব রাজ্যের নির্ধারিত ভাতা অনুসারে। এছাড়া করোনার আঘাতে যে সমস্ত সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য রাখা হয়েছে (৫০ বিলিয়ন) ৫০ হাজার কোটি ডলার।
কারা এ ফান্ডের আওতাভুক্ত:
বেশিরভাগ সংবাদ মাধ্যমে মোস্ট-আমেরিকান-অ্যাডাল্ট বলা হয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশিদের মাঝে এ নিয়ে রয়েছে মিশ্র-প্রতিক্রিয়া। ইউএস কংগ্রেসে পাশ হওয়া 'ফেডারেল-ফান্ড' পাচ্ছেন আমেরিকাতে বসবাসকারি সকল 'এলিজিবল-ইন্ডিবিজ্যুয়াল'। এখানে বলা আছে- যিনি ‘নন-রেসিডেন্ট এলিয়েন’ (এনআর) নন। যার মানে ইউএস সিটিজন ছাড়া যারা বিগত ২০১৮ কিংবা ১৯-এর ট্যাক্স ফাইল করছেনে; তাদের রিটার্নকৃত ফরম ১০৪০ দেখলেই পরিস্কার হয়ে যাবেন; কে পাচ্ছেন এই সমুদয় অর্থ।
তাহলে কে হচ্ছেন ‘নন-রেসিডেন্ট এলিয়েন’? যদি আপনি ট্যাক্স রির্টান করে থাকেন, নির্ধারিত ফরমে (১০৪০-এনআর) লেখা থাকে; তাহলে ধরে নিতে হবে ‘নন-রেসিডেন্ট এলিয়েন’। তবে, বেশিরভাগের ক্ষেত্রে যারা ট্যাক্স ফাইল করে থাকেন; তাদের রিটার্ন ফরমে (১০৪০ ইন্ডিবিজ্যুয়াল) লেখা রয়েছে। বস্তুত তারাই হচ্ছে 'এলিজিবল-ইন্ডিবিজ্যুয়াল'। মানে এসব লোকেরা পড়ছেন (ফেডারেল সরকার) ট্রাম্পের ‘স্টিমুলাস-প্যাকেজের’ আওতায়।
এবছর সিনিয়রদের জন্য (১০৪০-এসএর) লেখা রয়েছে। তবে, কারো ডিপেন্ডেন্ট হয়ে ১০৪০ ফর্মে (এনআর) উল্লেখ থাকলে ধরে নিতে হবে তিনি 'স্টিমুলাস-প্যাকেজের' আওতাধিন নন।
আরেকটা বিষয়- কারো যদি 'ইন্ডিবিজ্যুয়াল ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন-আইটিন' নম্বার থাকে; এমন কেউ যদি ট্যাক্স ফাইল করে থাকেন কিন্তু সোস্যাল সিকিউরিটি তথা 'ভেলিড-আইডিন্টিফিকেশন' নম্বর নেই; তাহলে তিনিও 'নন-রেসিডেন্ট-এলিয়েন'।
একই সাথে কারো সাথে ডিফেন্ডেন্ট ট্যাক্স ফাইলকারিও 'এলিজিবল-ইন্ডিবিজ্যুয়াল'র মধ্যে পড়ছেন না। যেমন- সন্তানের জন্য পাওয়া গেলেও; বাবা-মায়ের জন্য বরাদ্দ নেই। কারণ (এমন বাবা-মা) যেহেতু ইন্ডিবিজ্যুয়াল টেক্স করছেন না; সেহেতু তারা 'এলিজিবল-ইন্ডিবিজ্যুয়াল'র মধ্যে পড়ছেন না।
কেন এবং কি ভাবে পাচ্ছেন:
আমেরিকান কংগ্রেসে এই প্রস্তাব পাশ হওয়া অধিবাসিদের বার্ষিক মূল আয় (অ্যাডজাস্টেড গ্রোস ইনকাম) ৭৫ হাজার ডলারের কম, তাদের প্রত্যেকে ১২'শ ডলার পাচ্ছেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে ২৪'শ ডলার; আর বাচ্চার জন্য ৫শ।
তবে, এখানে ‘ফেইজ-আউট লিমিট’ রয়েছে। সিঙ্গেল কিংবা ম্যারেড ফাইলিং ৭৫ হাজার ডলার, ‘হেড অব হাউজ হোল্ড’ ১ লাখ ১২ হাজার ৫শ ডলার এবং ‘ম্যারিড ফাইলিং’ (জয়েন্টলি) ১ লাখ ৫০ হাজার এর নীচে থাকলে; মাথা পিছু ১২শ ডলার পাবেন। এর বেশি ‘গ্রোস ইনকাম’ হলে প্রত্যেক ১শ ডলারের বিপরীতে ৫ ডলার কমে যাবে। যেমন- নির্ধারিত ১২শ থেকে অতিরিক্ত আয়ে শতকরা ৫ ডলার করে কমে যাবে। যারা ২০১৮ কিংবা ১৯-এর ট্যাক্স ফাইল করেছেন; তারা প্রোফিট অ্যান্ড লসে পাতায় গিয়েও নিজেদের গ্রোস-ইনকাম দখতে পারবেন।
[গ্রোস আয় আপনার ট্যাক্স-ফাইলে কি ভাবে দেখবেন ধারণা কপি]
স্টিমুলাস-প্যাকেজে আপনার গ্রোস-ইনকাম (মোট আয়ের) উল্লেখ পূর্বক অনলাইনে গিয়েও দেখে নিতে পারেন! কত পাচ্ছেন আপনি? যা ওয়াশিংটন-পোস্টের এ লিংকে ক্লিক করে জানতে পারবেন। https://www.washingtonpost.com/graphics/business/coronavirus-stimulus-check-calculator/?fbclid=IwAR3jmiDNcGMRqTIQY9vi8rAVtzHQeLihptDfYlwd1AiZ0M3hvQQJBrUXdys
ধারণা করা হচ্ছে- আজ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এই অর্থ পাবেন। যদিও কংগ্রেসে এর কোন নির্ধারিত তারিখ উল্লেখ নেই। কিন্তু ধরে নেয়া হচ্ছে- এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। এছাড়া আরেকটি তারিখ নিয়েও কথা হচ্ছে । যা মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ।
‘ট্যাক্স-ক্রেডিট’ থেকে কর্তনযোগ্য ফেডারেল ফান্ড তথা ‘স্টিমুলাস-প্যাকেজের’ সমুদয় অর্থ যখনই পাঠানো হবে, তখন চেক কিংবা ব্যালেন্স ট্রান্সফার করা হবে। যা 'এলিজিবল-ইন্ডিবিজ্যুয়াল'র সবশেষ ঠিকানা কিংবা সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে। পৌঁছে যাবে। কংগ্রেসের নির্দেশনায় এমনটি রয়েছে।
কি ভাবে ফেরত নেয়া হবে এই অর্থ:
২০১৯ সালের যারা ট্যাক্স ফাইল করেছেন বা করবেন তাদের হিসেব ভিন্ন। তবে, ফেডারেল এই 'স্টিমুলাস-প্যাকেজে' পাওয়া অর্থ ২০২০ সালের ট্যাক্স রিটার্ন থেকে পাওয়া ক্রেডিট (অ্যাডজাস্টমেন্ট) কর্তন করে নেয়া হবে। যেমন ধরুণ- আপনি প্রতি বছর ট্রাক্স ফাইল করে সকল আয়-ব্যয়ের হিসেব শেষ; চাইল্ড-সাপোর্ট'সহ কিছু অর্থ পেয়ে থাকেন। যা ফেডারেল সরকার পরিশোধ করে।
যেমন ২০২০ আপনি ‘সিঙ্গেল-ফাইল’ করে ১৪'শ ডলার ক্রেডিট পেলেন; সেখান থেকে ১২'শ কেটে রাখা হবে। আবার ‘ম্যারিড-ক্যাপলের’ ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি। যেমন ‘জয়েন্টলি’ ট্যাক্স ফাইল করে আপনি ক্রেডিট পেলেন ২৮'শ ডলার। সেখান থেকে কেটে নেয়া হবে ‘স্টিমুলাস-প্যাকেজের’ ২৪'শ ডলার। তার মানে আপনি যে অর্থটা এখন পাচ্ছেন; সেটা আগাম ক্রেডিট দেয়া হচ্ছে। যা পরবর্তীতে কেটে নেবে ‘আইআরএস’।
তবে, রাজ্য সরকারের ‘আন-এমপ্লয়েমেন্ট ইন্স্যুরেন্সে’ পাওয়া অর্থ ফেরত নেয়া হবে না। যা ফেডারেল থেকে রাজ্যকে দেয়া হচ্ছে। কেবলমাত্র করোনা-ভাইরাসের কারণে কর্মহীনদের জন্য বিশেষ এ সুবিধা রাখা হয়েছে।
সবশেষ বলা যেতে পারে- ফেডারেল সরকারের ফেরতযোগ্য ‘স্টিমুলাস-প্যাকেজ’ এবং রাজ্য থেকে পাওয়া বেকার ভাতায় অনেকটা স্বস্তির নিশ্বাঃস ফেলবেন যুক্তরাষ্ট্র বাসবাসকারি বাংলাদেশিরা। কিন্তু নিউ ইয়র্ক সিটি'সহ অভিবাসি বান্ধব রাজ্য' ও শহরে বাসবাসকারি অবৈধরা বঞ্চিত হচ্ছেন- সব সুবিধা থেকে। ফলে, একদিকে করোনায় মৃত্যুর আতঙ্ক; অপরদিকে নগদে (ক্যাশে) কাজ করা গ্রোসারি এবং রেস্টুরেন্টের কর্মীদের জন্য স্বাভাবিক জীবনে ফেরা অনেক কঠিন হবে।
পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৯ শতাংশের সমান ফেডারেল সরকারের রেকর্ড এই ২ ট্রিলিয়ন ডলারের ‘স্টিমুলাস-প্যাকেজটি’ আমেরিকান হত দরিদ্র মানুষ, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ব্যয় করা হবে। তহবিলের অর্ধেক বা অবশিষ্ট ১ ট্রিলিয়ন ডলার করোনার আঘাতে আর্থিক সঙ্কটে পড়া কোম্পানিগুলোকে উদ্ধারে ব্যয় করা হবে।
করোনায় প্রাণহানি ও আক্রান্তের সংখ্যা:
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কবলে ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুসংখ্যা প্রায় ১৩'শ। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮৬ হাজার। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন মাত্র ১ হাজার ৮শ। এমন পরিস্থিততেই সিনেটে পাশ হওয়া ট্রাম্পের স্টিমুলাস প্যাকেজ বিল দ্রুত কংগ্রেস থেকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়। সমঝোতার মধ্য দিয়ে রাতভর হোয়াইট হাউজ এবং আইনপ্রণেতারা মিলে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।
এখন দেখার বিষয় ফেডারেল অর্থ পেয়ে সিটি ও রাজ্য সরকার কত দ্রুত তাদের হাসপাতালগুলোতে "প্রাইভেট প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট-পিপিই" সরবরাহ করতে পারে। সেই দিকেই তাকিয়ে লাখো আমেরিকান। করোনা-ভাইরাসের এ মহামারি ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সবাইকে আরো ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
-বিশেষ রিপোর্ট