ডেস্ক রিপোর্ট (চ্যানেল টিটি): আমেরিকার নব-নির্বািচত প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন ও কমলা হ্যারিস প্রশাসনে যুক্ত হলেন এক বাংলাদেশি আমেরিকান। নাম তার জাইন সিদ্দিক। তিনি হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফের অফিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হয়েছেন। বুধবার বাংলাদেশি এই বংশোদ্ভূতকে চূড়ান্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাইডেন প্রশাসনের 'ট্রানজিশন টিম'।
এমন খবরে আমেরিকান বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নেমে আসে উৎসবের জোয়ার। সবাই জাইন সিদ্দিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। যদিও তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বৃহস্পতিবার আমেরিকান বাংলাদেশিদের সোস্যাল মিডিয়াজুড়ে ট্রেন্ডিংয়ে 'জাইন' জায়গা করে নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে জাইন সিদ্দিকই নিজের মেধার গুণেই এই প্রথমবারের মতো বাইডেন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেলেন। তাকে হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফের 'সিনিয়র এডভাইজারে'র দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জাইন সিদ্দিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলেও বেড়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। আইন পেশায় নিয়েজিত হয়ে অল্প সময়ে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। এর আগে দীর্ঘদিন 'ল' ক্লার্ক হিসাবে কাজ করেছেন জাইন। ইউএস সুপ্রিম কোর্টের বিচারক এলিনা কাগানের সাথে তার কাজের দক্ষতা ছিল বেশ। এছাড়াও ওয়াশিংটন ডিসি সার্কিট কোর্ট এবং ক্যালিফোর্নিয়া ডিস্টিক্ট কোর্টের ক্লার্ক হিসাবেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশি আমেরিকান জাইনের।
জানা গেছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত কমালা হ্যারিস যখন প্রাইমারি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বিতর্কে অংশ নিতেন, সংশ্লিষ্ট ওই টিমের সাথেও যুক্ত ছিলেন জাইন। আইন পেশায় নিয়েজিত হয়ে অল্প সময়ে খ্যাতি অর্জন কারি জাইন সিদ্দিক এখন বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ক্রেজ।
ওবামা প্রশাসনে বাংলাদেশিদের ক্রেজ ছিলেন হিজাবি রুমানা:
এর আগে, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের হয়ে হোয়াইট হাউজে কর্মরত ছিলেন এক বাংলাদেশি তরুণী। যদিও প্রেসিডেন্টেন সাথে তার দেখা তেমন একটা হতো না। একদিন মাথায় হিজাব পড়া বাংলাদেশি রুমানাকে দেখে মুগ্ধ হলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওই সময়ে খবরটি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ে।
হোয়াইট হাউজে কর্মরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান হিজাব পরা তরুণী রুমানা আহমেদও গর্বিত ছিলেন নিজেকে নিয়ে। তিনি জানিয়েছিলেন, প্রায়াই হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা হতো। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারনে কখনো কোন বিষয়ে প্রেসিডেন্টের সাথে সরাসরি কথা হয়নি। হঠাৎ করে প্রথম যেদিন ওবামার মুখোমুখি হয়েছিলেন রুমানা; সেদিনটি ছিল অন্যরকম। হিজাবি মেয়েটিকে প্রেসিডেন্ট তখন নানা বিষয়ে কথা বলেন।
রুমানা আহমেদ নামের এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান তরুণী হিজাব পরেই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-উপেদষ্টা বেন রোডসের সহকারি হিসেবে কাজ করেছিলেন। রুমানা নিজেকে ‘হিজাবি’ বলেই পরিচয় দিতেন। এই হিজাব পরেই তিনি হোয়াইট হাউজে কাজ করছেন। ওই সময়ে তাকে নিয়ে একটি 'ফিচার' প্রতিবেদন প্রকাশ করে আল-আরাবিয়া।
বেন রোডস আল-আবারিয়াকে বলেন যারা দেশ ও প্রেসিডেন্টকে সেবা করতে পারে, তাদের মধ্যে অন্যতম ও গর্বিত একজন রুমানা আহমেদ। হোয়াইট হাউজ তার প্রতি মুগ্ধ। ওই সময়ে রুমানা অন্যদের জন্য, বিশেষ করে তরুণ মুসলিমদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
ওয়াশিংটনের উপকণ্ঠে ম্যারিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গে জন্মগ্রহণকারি রুমানা ওবামার আরেক সহকারি ভ্যালেরি জারেটের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেছিলেন। পরে, জ্যারেট তাকে হোয়াইট হাউজের জন্য যোগ্য হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন।
রুমানা জানান, হোয়াইট হাউজে কাজ করার সুযোগ পেয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে তার যোগাযোগ আরো বেড়েছে। ‘এটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার। কারণ আমি ইফতারে এবং বছর প্রেসিডেন্টের সাথে গোলটেবিলে আমার বক্তব্য তুলে ধরতে পরেছি,’ বলছিলেন রুমানা।
উল্লেখ্য, বিল ক্লিন্টন ও বুশ প্রশাসনের আমলে প্রচলিত হোয়াইট হাউজে মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে ইফতার পার্টি ছিল একটি বর্ণাঢ্য আয়োজন। সবশেষ ওবামার ৮ বছরেও তা বহাল ছিল। কিন্তু বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে তা বাতিল করে দেন। মুসলিম কমিউনিটিকে নিয়ে হোয়াইট হাউজের ইফতার পার্টি বন্ধ করা- ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষেরই অংশ বলে মত ছিল অনেকের।
বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা, "ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণ করেই মুসলিম ও ইমিগ্রেন্ট বিরোধি সব নিত বাতিল করবেন।"