এনওয়াইসি (চ্যানেল টিটি): এ যেন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির গল্প। যা থেকে রেহাই নেই কারো! নাম করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)। মরণব্যাধি এ ভাইরাসটি কেড়ে নিচ্ছে বিশ্বের লাখো প্রাণ। আক্রান্ত কোটি কোটি মানুষ। বলা হয়ে থেকে অভিবাসিদের স্বর্গ রাজ্য নিউইয়র্ক। এর বৃহত্তম নগরির নাম নিউইয়র্ক সিটি। যাকে বলা হয় বিশ্ব রাজধানী। এই সিটি যেন এক মৃত্যুপুরি! এরই মধ্যে আমেরিকাতে করোনায় মৃত্যুর রেকর্ড বিশ্বকে ছাড়িয়ে গেছে। এর তালিকায় যুক্ত হচ্ছে অসংখ্য বাংলাদেশি অভিবাসি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিস্থিতি আরো নাজুক। অভিবাসিদের স্বর্গরাজ্য খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতায় রূপ নিচ্ছে। নিউইয়র্কে নতুন করে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে উঠে আসছে বাংলাদেশিদের নাম। যার মধ্যে রয়েছেন একই পরিবারের অনেকে। কখনো পুরো পরিবার করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।
সবশেষ খবর পাওয়া গেছে বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রুকলিনের এক অভিবাসি পরিবারের দুইজনই প্রাণ হারিয়েছেন। মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে বাংলাদেশি-আমেরিকান বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন)। মৃত্যুবরণকারি বাবা-ছেলে হলেন ইঞ্জিনিয়ার খাইরুজ্জামান ও তাঁর ছেলে আবুল বাশার। গতকাল ১৯ ডিসেম্বর সকালে নিউইয়র্কে তাঁরা মারা যান।
জানা গেছে, খাইরুজ্জামান ও আবুল বাশারের গ্রামের বাড়ি বৃহত্তর চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তাঁরা দীর্ঘদিন ব্রুকলিনের অধিবাসি। একই দিনে একই পরিবারের দুই উজ্জল নক্ষত্র বাপ-ছেলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে।
'চ্যানেল টিটিকে' ব্রুকলিনের কমিউনিটি অ্যাক্টিভিটস নঈমুদ্দীন জানান- "করোনায় একই দিনে মৃত্যুবরণকারি পিতা-পুত্রের বাড়ি সন্দ্বীপের বাউরিয়াতে। সেখানকার কাছিম মাঝির বাড়ির ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ খায়রুজ্জাম এবং তাঁর একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ খায়রুল বাশার (পান্না) মারা গেছেন মাত্র তিন ঘন্টার ব্যবধানে।"
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রুকলিনের এই অধিবাসিদের নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে দশটায় ফ্লাটবুশ এভিনিউর "মসজিদ ইমামুল বুখারীতে" শেষ বিদায় জানানো হয় পিতা-পুত্রকে। তার এক সুহৃদ চ্যানেল টিটিকে জানান, "এ মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন। পিতা-পুত্রের এভাবে চলে যাওয়াটা একটি পরিবারের জন্য কতটা বিপর্যয়, তা বলা কঠিন।" তিনি জানান- "এরপরও কমিউনিটি'সহ সর্বস্তরের অভিবাসিদের কাছে সদ্য প্রয়াত বাবা-ছেলের জন্য দোয়া চেয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।" মরহুমদ্বয়ের নামাজে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে বৃহত্তর সন্দ্বীপ সোসাইটি-ইএসএর সার্বিক তত্ত্বাবধানে। নিউ জার্সির মালব্রো কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে তাদের।
এর আগে গেল ১৩ ডিসেম্বর করোনায় মারা গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডের নর্থ শোর এলএইজের প্যাথোলোজিক্যাল বিভাগের ভাইস চেয়ারপার্সন ডা. তৌফিকুল ইসলাম। মাত্র ৬১ বছরেরর ডা. তৌফিক স্ত্রী ও সন্তান রেখে গেছেন। তৌফিকুলও নিউইয়র্ক বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রিয় মুখ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ চিকিৎসক ছিলেন যিনি উচ্চপদে কাজ করতেন।
মাত্র গেল সপ্তাহে প্রাণ হারিয়েছিলেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি আবদুল হাই জিয়া। তাইতো নতুন করে করোনা মহামারি রোধে সচেতনতা অবলম্বনে কমিউনিটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।