করোনায় একই সংগঠনের তিনজনের জীবনাবশান

চলে গেলেন নিউ ইয়র্কের খায়ের ভাই 

চলে গেলেন নিউ ইয়র্কের খায়ের ভাই  ফাইল ফটো: আবদুল খালেক

এনওয়াইসি (চ্যানেল টিটি): যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে প্রবাসি বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র সহ-সভাপতি আবদুল খালেক খায়ের মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে খায়ের ভাই নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। সদা হাস্যজ্জল ও মানবিকতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত ছিলেন আবদুল খালেক।

তাঁর মৃত্যুর খবর চ্যানেল টিটিকে নিশ্চিত করেছেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু এবং সাবেক সভাপতি আবদুর রব মিয়া। দীর্ঘদিন ধরে হার্টের রোগে ভুগছিলেন আবদুল খালেক খায়ের।  মাস খানেক আগে চিকিৎসার জন্য 'লং আইল্যান্ড জুইশ হাসপাতালে' ভর্তিও হয়েছিলন। এরপর কিছুদিন সুস্থ ছিলেন তিনি। দুই সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় দফায় আবারো হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই সাথে আবদুল খালেক খায়েরের শরীরে ধরা পড়ে মরণব্যাধি  করোনা ভাইরাস। চিকিৎসাধিন অবস্থায় চলে যান লাইফ সাপোর্টে। প্রিয়জন ও শুভানুধ্যায়িদের প্রত্যাশা ছিল এই যাত্রাতেও ফিরে আসবেন সবার প্রিয় খায়ের ভাই। হুম তিনি ঠিকই ফিরেছেন! তবে, জীবিত নয়; মৃত। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সবাইকে কাঁদিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ৭টা পাঁচ মিনিটে চলে যান মৃত্যুযবনিকার ওপারে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশির দশকে স্বপ্নের সোনার হরিণের খোঁজে পাড়ি জমিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। আবদুল খালেক খায়েরের ওই যাত্রা ছিল অনেক কঠিন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পোহাতে হয়েছে তাঁকে। ব্যক্তি জীবনে ছিলেন একজন সফল মানুষ। এক ছেলে ও দুই কন্যার সন্তানের জনক ছিলেন খায়ের। বড়  ছেলের নাম নাজমুল হাসান। বড় মেয়ে রেহানা আলম রিঙ্কি, ছোট মেয়ে পিঙ্কি এবং প্রিয় সহধর্মীনি রৌশনারা আলামকে নিয়ে তাঁর ছিল সুখের সাম্রাজ্য।   

আবদুল খালেক খায়ের গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশ বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জের একলাশপুরে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আমেরিকান বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম। প্রবাসের পাশাপাশি মাতৃভূমির অসহায়দের সহায়তা নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি। কমিউনিটি বির্নিমানে তিনি ছিলেন অন্যতম সহনশীল মানুষ।

নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ও খায়ের সংশ্লিষ্টতাঃ
আবদুল খালেক খায়ের প্রবাসিদের আমব্রেলা খ্যাত বাংলাদেশ সোসাইটির  ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বেগমগঞ্জ সোসাইটির প্রতিষ্ঠা সভাপতি ও ট্রাস্ট্রিবোর্ড চেয়ারম্যান। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর অগ্রযাত্রায় তিনি ছিলেন সামনের কাতারে। এমন দাবি অনেকের। 

দাফন ও জানাজাঃ
সবশেষ খবরে জানা গেছে, প্রয়াত আবদুল খালেক খায়েরের প্রথম নামাজের জানাজা  অনুষ্ঠিত হবে ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১ টায়। স্থানঃ ৪১-০২ ফরলি স্ট্রিট এলমহার্স্ট নিউ ইয়র্ক -১১৩৭৩। করোনাকালিন স্বপ্ল পরিসরে মরহুমের দ্বিতীয় জানাজা নির্ধারণ করা হয়েছে দাফনের পূর্বে। দুপুর ১টায় 'ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল পার্কে' অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। স্থানঃ ৮৫৫ ক্যানাল রোড মাউন্ট সিনাই নিউ ইয়র্ক-১১৭৬৬। 

এদিকে, মরহুমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু চ্যানেল টিটিকে বলেন, "আমরা একে একে প্রিয় মানুষগুলোকে হারাচ্ছি। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খায়ের ভাই। যিনি ছিলেন পরপোকারি এবং মানবতার প্রতীক। তাঁর শূন্যতা পূরণ হবার নয়। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।"

আবদুর রব মিয়া বলেন, "খায়ের ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। এরপরও বিধাতার লিখন মেনেই নিতে হচ্ছে। কাউকে শান্তনা দেবার ভাষা আমাদের জানা নেই। তবুও, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।" বলছিলেন রব মিয়া। 

এছাড়া, বাংলাদেশ সোসাইটির তরফেও তার আত্মার মাগফিরাত কমানা করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে। সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রহীম হাওলাদার এবং সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিক তাদের সহপাঠির মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।  

করোনায়  হারিয়ে গেলেন বাংলাদেশ সোসাইটির তিন নেতাঃ
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস (কোভিড১৯) বিশ্বের প্রাণহানির সংখ্যা অনেক। খুব দ্রুতই ঝরে গেছে অনেক তাজা প্রাণ। চোখের সামনে থেকে প্রিয়জনের হারিয়ে যাওয়ার খবর মূলত শুরু হয় চলতি বছরের মার্চ থেকে। যা এখনো চলমান। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্ত হলেন- বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, আজাদ বাকের এবং সবশেষ আবদুল খালেক খায়ের। চলতি বছরের ৩১ মার্চ গুরুতর অসুস্থ হয়ে নিউ ইয়র্কের এলমহার্স্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ।

সেখান থেকে ৬ এপ্রিল চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এর মাত্র এক সপ্তাহ পর ১৩ এপ্রিল একই সংগঠনের কার্যনির্বাহি সদস্য আজাদ বাকেরও চলে গেলেন। মৃত্যু হচ্ছে চিরন্তন সত্য। তবুও কিছু কিছু মৃত্যু অপ্রত্যাশিত। যাদের মধ্য অন্যতম কামাল, বাকের ও খায়ের। মহান রাব্বুল আল-আমিন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করুন। আমিন।