চ্যানেল টিটি
[অ্যা ডিজিটাল ব্রডকাস্টিং মিডিয়া ইনক.]ট্রাফিক, ট্রান্সপোর্ট, ট্যুরিজম ও টেকনোলজি নির্ভর একটি প্রতিষ্ঠান....
শিবলী চৌধুরী কায়েস | ০৫:২১ এএম, ২০২০-০২-২২
নিউ ইয়র্ক (চ্যানেল টিটি): চতুর্থবারের মতো জাতিসংঘ সদর দফতরে উদযাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। যথাযোগ্য মর্যাদায় ও আন্তর্জাতিক আবহে দিবসটি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে বিশ্ব সংস্থা। যাতে অংশ নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বলেন, ভাষার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সংঘাত, অহিষ্ণুতা ও সামাজিক উদ্বেগ মোকাবিলা করাই হচ্ছে অন্যতম কাজ।
বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজন বাংলাদেশ, অষ্ট্রেলিয়া, ক্যামেরুন, মেক্সিকো, ত্রিনিদাদ ও টোবাকো মিশন এবং জাতিসংঘ সচিবালয় ও ইউনেস্কো নিউইয়র্ক অফিসের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টায় জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সার্বিক তত্বাবধানে ছিল জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এছাড়া সংস্থাটির সদস্য দেশসমূহের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, প্রবাসী বাংলাদেশী বিশিষ্ট নাগরিক, মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকর্মীদের স্বতঃর্র্স্ফূর্ত অংশগ্রহণে পুরো মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত ভাষণ দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
আলোচনা পর্বে অংশ নেন আমন্ত্রতি অতিথি'সহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। যাদের মধ্যে-জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি তিজানি মোহাম্মাদ বান্দে, ত্রিনিদাদ ও টোবাকোর স্থায়ী প্রতিনিধি পেনিলোপি আলথিয়া বেকলেস, অষ্ট্রেলিয়ার চ্যার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিজ টিগান ব্রিঙ্ক, ক্যামেরুনের চ্যার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জাকাইরি সারজে রাউল নাইয়ানিদ, মেক্সিকোর চ্যার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হুয়ান স্যানডোভাল মেনডিওলিয়া, জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে ইউএন বৈশ্বিক যোগাযোগ বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মেলিচ্ছা ফ্লেমিং, সাধারণ পরিষদ ও কনফারেন্স ব্যবস্থাপনা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষে পরিচালক সিসিলিয়া এলিজালদে অন্যতম।
এছাড়া ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের পক্ষে বাণী পড়েন নিউইয়র্কের ইউনেস্কো অফিসের পরিচালক মারিয়ে পাওলি রোউডিল। বরাবরের মতো এবারো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিও অনুষ্ঠানে বাণী দেন। যা পাঠ করে শোনানো হয়।
এবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল (ল্যাঙ্গুয়েজ উদাউট বর্ডার) ভাষার কোনো সীমানা নেই। বিষয়টি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ভাষার শক্তি সীমান্ত অতিক্রম করে যায় এবং ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ও তাদের সংস্কৃতিসমূহকে সংযুক্ত করে। লুপ্ত প্রায় ভাষা সংস্কৃতিসহ বিশ্বের সব ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষায় সদস্য রাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহবান জানান তিনি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি তিজানি মোহাম্মাদ বান্দে বলেন, উল্লেখযোগ্য হারে যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভাষাসমূহ হারিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেইক্ষণে ভাষা বৈচিত্র ও বহুপক্ষবাদ টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য মর্মে উল্লেখ করে ২০১৮ সাল থেকে তা এগিয়ে নিতে জাতিসংঘ নেতৃত্বশীল ভূমিকা রাখছে। মাতৃভাষাকে সমুন্নত রাখতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই দ্বিগুণ প্রচেষ্ঠা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা পর্ব শেষে এবং সাংস্কৃতিক পর্বের আগে ২১ ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর একটি প্রামাণ্য চিত্র পরিবেশন করা হয়।
বিশ্ব সংস্থায় অনুষ্ঠিত ওই আয়োজনে ছিল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। প্রথম পর্বের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রী চিন্ময় গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী কমিউনিটির যুব শিল্পীরা কালজয়ী সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশন করেন। এরপর ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলী থেকে নেয়া ইংরেজি কবিতা ‘স্ট্রীম অব লাইফ’সহ বাংলা, নবজা, ক্রিয়ল, সংস্কৃত এবং সোহেলী ভাষায় সংগীত ও যন্ত্র সংগীতের সুর-মূর্ছনায় প্রানবন্ত হয়ে উঠে পুরো আয়োজন।